Monday, January 30, 2017

 3:46 AM         No comments

রুম নং-৩৩০

.

ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর থেকে লোকমুখে প্রচলিত একটা কথা শুনে আসছিলাম-আমাদের ভার্সিটির এসএম হলের একটি রুম নাকি তালাবদ্ধ!
এই রুমটিতে নাকি ভৌতিক ব্যাপারগুলো ঘটতো কোন একসময়।তাই হলকতৃপক্ষ চাইলেও রুমটিতে কোন শিক্ষার্থী ভয়ে উঠতো না।আমি তখন ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।প্রথম বছরে হল পাওয়া আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল।কিন্তু আমি আটলাম অন্য ধান্দা।হলে এলোট দিল।এপ্লিকেশন জমা দিলাম এবং সৌভাগ্যক্রমে ভাইবার ডাক পরল।ভাইবায় সাহস করে বলে বসলাম-আমি ঐ আটকা রুমে একটা সিট চাই!
প্রভোস্ট স্যারের চোখ তখন কপালে,আমতা আমতা করে বললেন-এই ছেলে,তুমি কি জানো রুমটিতে কি হয়?
আমি শান্তভাবে জবাব দিলাম-জানি স্যার!
স্যার বললেন,সব জেনেও তোমার ভয় করবেনা?
আমি তখন খানিকটা তাচ্ছিল্য করে বললাম-স্যার আপনিও কি অন্য সবার মত ভূতে বিশ্বাসী?
স্যারের মনে হয় এবার ইগোতে টাচ করে ফেলেছি,স্যার কিছুটা বিব্রত হয়ে বলতে লাগলেন-ঠিক তা না,আমিও ওসবে কম বিশ্বাসী।তবে রুমটি ভয়ংকর জেনেও আমি তো আর আমার স্টুডেন্ট কে ওখানে যেতে দিতে পারি না,তায় আর কি!
স্যার যে ভেতরে ভেতরে অনেক ভয় নিয়ে কথাগুলো স্রেফ নিজের আত্বসন্মানের ক্ষাতিরে বললেন,তা বুঝতে বাকি রইলো না।
আমি এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,আমি পারবো স্যার!আমাকে আপনি ঐ রুমটিতেই সিট দিন।
.
অবশেষে ৩৩০নং রুমে সিট হয়ে গেল আমার।রুমের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলাম।অন্ধকারে ঘড়ের পুরোটা দেখতে পাচ্ছিলাম না,এগিয়ে গেলাম আরেকটু।জানালাটা খুলে দিলাম,এবার ভীতরটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে।কয়েকটা তেলাপোকা উড়ে গেল,একটা টিকটিকি দেয়াল বেয়ে উপড়ে উঠে গেল।রুমটা একেবারে নোংড়া,রাজ্যর আবর্জনা যেন রুমের ভেতর।লেগে পড়লাম রুম পরিষ্কারের কাজে।রাত ৮টায় রুম পরিষ্কার করা শেষ হলো।এবার তারাতারি করে গোসল করে ডাইনিং এ খেতে গেলাম।ডিনার শেষে রুমে ফিরে কিছুক্ষণ ফেবু ইউজ করলাম-তারপর ঠিক কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না।ঘুম ভাঙ্গল সকাল ৮টায় আলমগীরের ফোনে।
তারাতারি রেডি হয়ে ক্লাসে গেলাম।
.
ঠিক তার পরের দিন,দিনটা ছিল শনিবার।তারিখটা ঠিক মনে নেই।রাত তখন ৯টা বাজবে,আমি চেয়ারে বসে ক্লাসের এসাইন্টমেন্ট করছিলাম।জানালাট
া তখনও খোলা,হঠাৎ কলমের কালি ফুরিয়ে গেল।জানালা দিয়ে নষ্ট কলমটি ফেলতে যাবো,ঠিক তখনি লক্ষ্য করলাম একটা ছায়ার মত কিছু জানালার কাছ থেকে দ্রুত সড়ে গেল।আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে উকি দিলাম,কিন্তু আর কিছুই দেখতে পেলাম না।
রাত তখন ১২টা।আমার এসাইন্টমেন্ট লেখা কমপ্লিট।এবার চেয়ার থেকে উঠে বিছানায় একটু হেলান দিয়েছি,অমনি কি একটা তীব্র গন্ধ নাকে আসল।এই গন্ধটার ব্যাখা আসলে দেওয়া কঠিন,কেননা কোন পারফিউম এর গন্ধের সঙ্গে এটির মিল ছিল না।সম্পূন আলাদা একটা গন্ধ,যেটি ভেতরকে আন্দোলিত করছিল।
আমি অনেক ভেবেও গন্ধের উৎস খুজে পাচ্ছিলাম না।অবশেষে রুমের জানলাটা বন্ধ করলাম।লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়েছি মিনিট দশেক হবে,এর ভেতর রুমের ভেতর একটা খস খস আওয়াজ শুনতে পেলাম।মনে হচ্ছিল রুমের ভেতর কেউ আছে।প্রচন্ড ভয় পেলাম,তবুও ভেতরে ভেতরে সাহস সঞ্চার করে লাইট জ্বালিয়ে পুরো রুম চেক করলাম।কোথাও কিছু নেই।
এবার লাইট আর নেভালাম না।লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পরলাম।কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না।এপাশ ওপাশ করছি হঠাৎ করেই খট খট শব্দ পেলাম,মনে হচ্ছে দরজার বাহিরে কেউ দাড়িয়ে শব্দ করছে।সাহস করে দরজাটা খুলে দেখি একটা ভয়ঙ্কর শরীরের কেউ ভেসে আছে দরজার পাশে।চোখ দুটো ভয়ঙ্কর রকমের লাল।গলায় ফাস লাগানো দড়ি।আমার শরীর ঘামতে শুরু করল।সাহস করে বললাম-কে ওখানে?
একটি প্রকম্পিত শব্দ আসল-এটা আমার রুম!
আমি বললাম-আপনার এ অবস্থা কেন?
চোখ দুটো আরও জ্বলে উঠল,কর্কশ কন্ঠে বলতে লাগল-এসএসসি,এইসএসএসি তে জিপিএ-৫ পেয়ে রাবিতে ভর্তি হই স্বপ্ন পূরনের উদ্দেশ্য।সবকিছু ঠিক ছিল,কিন্তু একদিন এক বড়ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজনিতীতে নাম লেখাই।মিছিল,মিট
িং,সমাবেশ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি ধীরে ধীরে।একসময় নেশায় আসক্ত হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।দেখতে দেখতে পরিক্ষা চলে আসে।কিন্তু ততদিনে সিলেবাসটাই আমার খুলে দেখা হয় নি।ফেইল করে পুনরায় ফাস্ট ইয়ারে থাকতে হয়।আমি ততদিনে পাকাপোক্ত রাজনিতী শুরু করেছি,আমার হাতে তখন অনেক ক্ষমতা।নেশা,জুয়া,মেয়ে কোনটাই বাদ রাখিনি সেসময়।আবার পরিক্ষা আসে,পুনরায় ফেইল করি।তৃতীয়বার ভার্সিটি থেকে আমাকে আর পরিক্ষা দিতে দেয় না,উপস্থিতি ০% থাকায়।আমার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।আমার সংগঠনের কোন নেতাই সেদিন আমাকে সাহায্য না করে তাড়িয়ে দেয়।স্যারদের পা ধরে কান্না করেছি,কেউ আমার কথা শুনেনি।দিনকয়েক পরে বাবা হঠাৎ করেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।আমি তখন এতিম অসহায়।রোজ রাতে কান্না করতাম।একদিন নোটিশ আসে রুম ছাড়ার-সেরাতেই রুমের জায়গা পাকাপোক্ত করতে রশি বেধে আত্নহত্যা করি।এখন এ রুম আমার,শুধুই আমার।বলেই হো হো করে হেসে দিয়ে বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যায়।যাওয়ার আগে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়।যাতে লেখা ছিল-"ছাত্রজীবনে পড়াশুনাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত"
.
[বিদ্র:সম্পূন কাল্পনিক]
COLLECTED

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Powered by Blogger.
Outdoor
Fashion
Life-Style

Flickr

Twitter Feeds

Sponsor

Recent comments

Beauty

FACEBOOK

Comments

Flickr