Tuesday, January 10, 2017

 11:40 PM         No comments
আইইউটিতে যখন ফোর্থ ইয়ারে পড়ি (২০১০) তখনই সাহস করে বাসায় বলে ফেললাম, "আব্বা, বিয়ে করব"।আমাদের দেশে ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চাওয়াটাকে এক ধরণের অপরাধ হিসেবেই ধরা হয়। আমার বাসায়ও ভয় পেয়ে গেল। আমাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললো, "কোনমতে জাস্ট পাসটা কর, তারপরই বিয়ে দিয়ে দিব; চাকুরিও পাবার দরকার নাই। এখন বিয়ে করলে মানুষ কি বলবে? মান-সম্মান থাকবে?"
আমিও বুঝলাম। পাস করে বের হবার পর বেকার ছিলাম প্রায় ৯ মাস। তখন তো বিয়ের কথা মুখে আনা প্রায় অসম্ভবই। এরপর মোটামাটি আয়-রোজগারের একটা ব্যবস্থা হলো (মাসে ১৮ হাজার টাকার মত)। এর কিছুদিন পর বাসায় আবার বললাম বিয়ে করার কথা। আব্বা বললেন - এই টাকায় ফ্যামিলি চালাতে পারবি? ঢাকা শহরে তো বাড়িভাড়াই হবেনা এই টাকায়। আমি কিন্তু ১ টাকাও দিতে পারব না। You have to be at your own! ভেবে দেখ।
সাত-পাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসলাম। ঠিকই তো! এই টাকায় চলব কিভাবে? এভাবে আরও কিছুদিন গেল। আবার বললাম। আবার একই উত্তর। আবার পিছালাম। এভাবেই চললো কিছুদিন।
শেষমেস ঠিক করলাম। দরকার হলে রিস্কই নিব। আমার পরিচিত অনেকে তো মাসে ৮ হাজার টাকা স্যালারি পেয়েও ২-৩ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুন্দর সংসার চালাচ্ছে, তাঁরা পারলে আমি পারবনা কেন? লাইফ-স্ট্যান্ডার্ড নিচে নামিয়ে আনতে হবে? আনব। দরকার হলে বস্তিতে থাকব।
এরপর বিয়েটা করেই ফেললাম (জুন, ২০১৩)। আমার ২ ফ্রেন্ডের কাছে ২০ হাজার ও ৩০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা ধার করলাম। হবু বউকে আগেই জানিয়ে দিলাম আমি গরিব মানুষ। পুঁজি বলতে আমার এই ৫০ হাজার টাকাই। এর বেশি মোহরানা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আর পুরোটাই নগদ দিতে চাই। সে রাজি হলো।
কিভাবে জানি আরও ১০ হাজার টাকা ম্যানেজ হলো। বিয়ের দিন কি কি সব খরচে দেখি ২ হাজার টাকা শর্ট! দৌড়ায়ে গেলাম ছোট ভাইয়ের কাছে। বিভিন্ন সময়ে সে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া ১০০, ২০০ টাকা মিলিয়ে যে ২-৩ হাজার টাকা জমিয়েছিল তা থেকে ২ হাজার টাকা ধার দিল।বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ের পরদিন বউয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে পাওনাদারদের ধার শোধ করলাম ধীরে ধীরে। বিয়ের আগেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে রেখেছিলাম । ভাড়া ৭ হাজার টাকা প্রতি মাসে। বিয়ের ৩-৪ দিন পরই ঢাকায় চলে আসলাম নতুন বাসায়। ফার্নিচার বলতে মেসে থাকার জন্য কেনা ১ হাজার টাকা দামের একটা চৌকি আর ৫০০ টাকা দামের একটা টেবিল আর মেসে মিশুকের ফেলে রেখে যাওয়া একটা প্লাস্টিকের চেয়ার।
সংসার চালানোর জন্য যত খরচ হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম বাস্তবে খরচ তার তুলনায় কমই। খরচ বেড়েছে বলতে বাসা ভাড়া ৪ হাজার টাকা (আগে ৩ হাজার লাগত আর তখন ৭ হাজার), খাওয়ার খরচ প্রায় অপরিবর্তিতই আছে (আগে ১০০০ টাকা বুয়া বিল লাগতো সেটা কমে গেছে)। তবে আগে যেমন হাতখুলে খরচ করতাম, তখন সেটা মোটামুটি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হলো। পার্থক্য এটুকুই। সেই খরচেই সুন্দর চলে যেতে লাগলো।
কয়েকমাস পর বউ বললো একটা ফ্রিজ কেনা দরকার। টাকা জমাতে হবে। কয়েকমাস টাকা জমিয়ে ২০ হাজার টাকার মত হলো। ফ্রিজের দোকানে গেলাম। বউ পছন্দ করলো প্রায় ৩০ হাজার টাকা দামের একটা ফ্রিজ। আমি আনইজি ফিল করা শুরু করলাম। আমার কাছে তো এত টাকা নাই। সব মিলিয়ে বাইশ হাজার টাকা হতে পারে। বউ দেখি হাঁসে। এই কয়দিনে বউও প্রায় ৮ হাজার টাকার মতো জমিয়ে ফেলেছে সংসারের খরচ সেভ করে।
এখনো মাঝে মাঝে অবাক লাগে। আগে টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারিনি আমি। বিয়ের আগে প্রায় এক-দেড় বছর যে আয় ছিল, বিয়ের প্রায় বছরখানেক পর পর্যন্তও আয় ছিল একই। বিয়ের আগের প্রায় এক বছরে সেভিংস ছিল শূন্য টাকা। বিয়ের পরের এক বছরেও সেভিংস শূন্য, কিন্তু ২ জনের একটা সংসার চালিয়েও ফ্রিজসহ আরও অনেক কিছু কেনা হয়ে গেছে!
বিয়ে করলে আসলেই আয়ে বরকত আসে। রিজিকের মালিক আল্লাহ- এটা নতুন করে অনুভব করেছিলাম তখন। যারা বিয়ে করবেন মনস্থির করেছেন, পাত্রীও ঠিক করা আছে কিন্তু টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারছেন না, সাহস করে বিয়েটা করেই ফেলুন। ইনশাল্লাহ, আয়ে বরকত আসবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহই। অপচয় না করলে আর অলস না হলে তো অভাব হবার কথা না।
ফুটনোটঃ বিয়ের জন্য যে দুই ফ্রেন্ডের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম, ধার শোধ করে তাঁদের বিয়ের সময়ও সেই একই পরিমান টাকা ধার দিতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। মাঝে মাঝে এই ৫০ হাজার টাকাকে খুব বরকতময় মনে হয়! কি সুন্দর এই হাত থেকে ঐ হাতে যাবার অছিলায় ৩ জনের বিয়ে সুন্দরভাবে হয়ে গেল!

public univesity students

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Powered by Blogger.
Outdoor
Fashion
Life-Style

Flickr

Twitter Feeds

Sponsor

Recent comments

Beauty

FACEBOOK

Comments

Flickr